পুলিশ কর্মকর্তা সাকলায়েন পরীমনির সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে আলোচনায় থাকার কারণে , ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. গোলাম সাকলায়েনকে বদলি করা হয়েছে। আজ শনিবার দুপুরে এডিসি সাকলায়েনকে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের এক আদেশে ডিবি থেকে ডিএমপির পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্টে (দাঙ্গা দমন বিভাগ, পশ্চিম) বদলি করা হয়।
ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মো. ফারুক হোসেন এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বলে জানাগেছে । তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বদলির আদেশের আগেই সাকলায়েনকে সম্প্রতি ডিবির সব ধরনের দায়িত্ব থেকে বিরত রাখা হয়েছে।
ডিবির গুলশান বিভাগের এডিসি (অতিরিক্ত উপকমিশনার) গোলাম সাকলায়েনের ঘনিষ্ঠতা পরীমনির সঙ্গে রয়েছে বলে এমন একটি খবর গণমাধ্যমে আসে। পরীমনির সাথে ঘনিষ্টতা থাকার কারণে সাকলায়েনের বাসায় পরীমনির যাতায়াত ছিল বলে অভিযোগ ওঠে।
এদিকে যদিও সাকলায়েন গণমাধ্যকে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, পরীমনি যে মামলা করেছেন সেই মামলা করার সূত্রেই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে তিনি দায়িত্বে ছিলেন এবং তাঁকে পরীমনি ফোন করেছিলেন বলে জানান। সাকলায়েন আরো বলেন তাঁর বাসায় পরীমনির যাতায়াত ছিল না এবং তাঁর সঙ্গে কোনো রকম অবৈধ সম্পর্কও নেই।
এনিয়ে বেসরকারি সংবাদ মাদ্ধমে একাত্তর টেলিভিশনের সংবাদে বলা হয়েছে, তাদের কাছে সিসি টিভি ফোটেজ আছে এবং ১ আগস্ট সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে পরীমনির সাদা রঙের একটি হ্যারিয়ার গাড়ি থেকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা নামেন এবং সাথে পরীমনিও ছিলেন লাল রঙের টি-শার্ট পরিহিত অবস্থায়। এরপর নায়িকা পরীমনি সাদা রঙের একটি স্লিপিং গাউন পরিহিত অবস্থায় তার গাড়ি থেকে দুজনই নামেন ।
পুলিশ কর্মকর্তাদের বাসভবনের নিচে নিরাপত্তার জন্য, এসময় নিয়োজিত পুলিশ সদস্যদের কাছ থেকে বাসার চাবি নেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা। এরপর পরীমনি এবং সাকলায়েন তাঁরা দুজনই লিফটে করে ওই বাসায় যান। এবং সিসি টিভি ফোটেজে দেখা যায় পরীমনির গাড়ি থেকে একটি ট্রলি ব্যাগ বের করে ওই পুলিশ কর্মকর্তার সেই বাসার ভিতরে সাথে করে নিয়ে যাচ্ছেন।
সেই খবরে বলা হয়ছে, আলোচিত সেই পুলিশ কর্মকর্তার নাম গোলাম সাকলায়েন। তিনি গুলশান বিভাগের ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার হিসেবে কর্মরত ছিলেন এবং তার সরকারি ফ্ল্যাট ছিল রাজাবাগ অফিসার্স কলোনির মধুমতি ভবনে অবস্থিত।
এরই মধ্যে সম্প্রতি আরো কিছু সংবাদ মাদ্ধমে ও গণমাধ্যমে আরো বেশ কিছু এ সংক্রান্ত খবর প্রকাশিত হয়েছে।
এই ঘটনার অভিযোগের কারণে সাকলায়েনকে আজ শনিবার দুপুরের দিকে ডিবির এডিসি সাহেব বদলির আদেশ দেন।
অন্যদিকে পরীমনির কস্টিউম ডিজাইনার জিমিকে রিমান্ডে দেয়া হয়েছে-
চিত্রনায়িকা পরীমনির কস্টিউম ডিজাইনার জুনায়েদ করিম জিমিকে
মাদক মামলায় তিন দিন জন্য রিমান্ডে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আলসালত এবং জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য অনুমতিও দিয়েছেন আদালত। এঘটনায় পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত আজ কোর্ট শনিবার এই আদেশ জারি করেন।
এর আগে পুলিসকর্মতারা আসামি জুনায়েদ করিম জিমিকে আদালতে হাজির করার পর ১০ দিনের জন্য রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে পুলিশ কর্মকর্তারা। এবিষয়ে উভয় পক্ষের শুনানির জন্য আদালত জুনায়েদকে তিন দিন রিমান্ড মঞ্জুর করেন এবং এ নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন।
গুলশান শুটিং ক্লাব এলাকা থেকে জুনায়েদ করিমকে আটক করা হয়েছে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে তিনি আটক হন এবং জুনায়েদ করিম জিমির কাছ থেকে ২২৫টি ইয়াবা বড়ি উদ্ধারের ঘটনায় ঢাকা বনানী থানায় তাঁর বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে বনানী থানায় মামলা হয়।
চিত্রনায়িকা পরীমনি গত ১৩ জুন ঢাকা বোট ক্লাবে ধর্ষণ চেষ্টার শিকার হয়েছেন বলে যে অভিযোগ রয়েছে সে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেছিলেন, সেখানে পরীমনির ও তারসাথে চয়নিকা চৌধুরীকে দেখা গিয়েছিল। আর এদিকে বোট ক্লাবের ঘটনার মধ্যে পরীমনির সাথে সঙ্গী ছিলেন তার কস্টিউম ডিজাইনার জুনায়েদ করিম জিমি।
ডিবির যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশীদ গতকাল শুক্রবার দুপুরের পর সাংবাদিকদের একথা বলেছিলেন, রিমান্ড দেয়ার পর পরীমনিসহ চারজনকে মামলার অভিযোগের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা ইচ্ছে বলে জানা গেছে। তাঁরা যে এমন অন্ধকার জগতে পা রেখেছেন, এর পেছনে কারা পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন, তাঁদের এক এক করে আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানা গেছে। নায়িকা পরীমনির অন্ধকার জগতের পৃষ্ঠপোষকদের একজন হলেন জিমি করিম। এরই মাঝে তাঁর বিষয়েও খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।
এর আগেও প্রায় একই ধরনের অভিযোগের কারণে তাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে তার সাথে আরও পাঁচজনকে। এর মধ্যেই গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে আটক হন আওয়ামী লীগের সদ্য বহিষ্কৃত কেন্দ্রীয় উপকমিটির সদস্য হেলেনা জাহাঙ্গীর। এবং রবিবার মধ্যরাতে আটক করা হয় ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা ও মরিয়ম আক্তার মৌকে। এরপর মঙ্গলবার রাতে আটক হন শরফুল হাসান ওরফে মিশু হাসান এবং তাঁর সহযোগী মাসুদুল ইসলাম ওরফে জিসান। বিভিন্ন মামলায় তাঁরা সবাই রিমান্ডে আছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে করা সাতটি মামলার তদন্তের দায়িত্ব গতকাল সিআইডিতে স্থানান্তর করা হয়েছে বলে জানা গেছে।